সময় ব্যবস্থাপনা জীবনের এক অপরিহার্য উপাদান। সত্যি বলতে, সময়ের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নেই। আমরা কর্মক্ষেত্রে প্রায়ই সময় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নিই। দিনের কাজ কখন করবেন, কোন কাজটি আগে বা পরে করবেন—এসবই সময় ব্যবস্থাপনার অন্তর্গত। যদি এটি সঠিকভাবে না করা হয়, তবে সারা দিন কঠোর পরিশ্রম করেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায় না।
প্রথমে আমাদের জানতে হবে সময় আসলে কী। সময় তো ঘড়ির কাঁটায় চলে। একে বলা হয় ক্লক টাইম, যা কখনো পরিবর্তিত হয় না। কিন্তু সময় আসলে আপেক্ষিক। কাজ থেকে দশ মিনিটের বিরতি নিয়ে ইউটিউব বা ফেসবুক ব্রাউজ করতে গিয়ে নিজের অজান্তে ঘণ্টা কেটে যায়। আবার ল্যাপটপে একঘেয়ে কাজ করতে করতে যেন লাঞ্চ টাইম আর আসে না। তাই জীবনের ২৪ ঘণ্টাকে বুদ্ধি করে সাজিয়ে সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করলে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
সময়কে মাত্র তিনভাবে ব্যয় করা যায়—চিন্তা করা, কথা বলা, ও কাজ করা। আমরা দিনভর যা-ই করি না কেন, তা এই তিনটির মধ্যে পড়ে। আর জীবনে সফলতার পথে এগিয়ে যেতে হলে এই তিন ধরনের কাজকেই দিনের করণীয় তালিকায় রাখতে হবে। এবার সময় ব্যবস্থাপনার কিছু কার্যকর উপায় দেখে নেওয়া যাক:
সময় ব্যবস্থাপনা
১. সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন সময় রেকর্ড করা: কর্মক্ষেত্রে কথোপকথন, প্রজেক্ট, এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে কতটা সময় লাগে, তা নজরে রেখে সপ্তাহজুড়ে রেকর্ড করতে হবে। শুধু কাজের হিসাব নয়, যতভাবে সময় ব্যয় হয়, সবকিছুকেই গোনায় ধরতে হবে। এভাবে এক সপ্তাহের ডাটা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে সময় কোথায় যাচ্ছে।
২. নিজের কাজের জন্য আলাদা সময় রাখা: আলাদা সময় নির্ধারণ না করলে কোনো কাজই সঠিকভাবে করা যায় না। প্রাত্যহিক করণীয় কাজের ভিড়ে নিজের বিশেষ কাজগুলো হারিয়ে যায় বা মানের ক্ষেত্রে আপস করতে হয়।
৩. চিন্তা করার জন্য সময় বরাদ্দ: কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে প্রতিটি কাজই সুচিন্তিত হওয়া প্রয়োজন। এই ব্রেনস্টর্মিংয়ের জন্য আলাদা সময় অবশ্যই রাখতে হবে।
৪. কাজের বিঘ্ন ও বিরতিগুলোকে গোনায় ধরা: শুধু কাজ নয়, অকাজগুলোকেও হিসাবের মধ্যে আনতে হবে। কেউই টানা কাজ করতে পারে না। শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে বিরতি নেওয়া বা বিভিন্ন কারণে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এই সময়গুলোকে নজরে রেখে হিসাবের মধ্যে ধরতে হবে।
৫. দিনের প্রথম ৩০ মিনিট পরিকল্পনার জন্য রাখা: কাজ শুরুর আগে প্রথম ৩০ মিনিট দিনের পরিকল্পনার জন্য বরাদ্দ করা উচিত। এতে সময় অপচয়ের সম্ভাবনা কমে যায়। পরিকল্পনা ছাড়া দিন শুরু করলে কাজের শৃঙ্খলা বজায় থাকে না। তাই এই ৩০ মিনিটই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।
৬. লক্ষ্য স্থির করা: লক্ষ্য ছাড়া কাজ করে কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। প্রতিটি কাজ, মিটিং বা ফোনালাপের আগে এর মূল লক্ষ্য বা কী পাওয়া যাবে তা ঠিক করে নেওয়া উচিত।
৭. সবাইকে জানিয়ে দিন যে আপনি ব্যস্ত: ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ সাইন সবসময় লাগানো সম্ভব না হলেও, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। এতে এ সময় কেউ অযথা বিরক্ত করবে না। যেকোনো মেসেঞ্জার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিরক্ত না করার সিগন্যাল সেট করা যেতে পারে।
৮. সারাক্ষণ অন্যদের মনোযোগ না দেওয়া: সবসময় চাইলেই আপনাকে পাওয়া যাবে, এমন ধারণা থেকে সবাইকে বের করে আনতে হবে। নয়তো কোনো কাজই ঠিকভাবে করা যাবে না। ফোন বাজলেই ধরতে হবে, ইমেইল এলেই খুলে দেখতে হবে—এমনটি হতে পারে না। মেসেঞ্জারগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।